ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হলে, মারা যাবে যত মানুষ
প্রকাশিত : ২১:৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২১:৩৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে কাশ্মীরের পাহেলগাঁওতে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস, সীমান্ত বন্ধ, ভিসা বাতিল এবং বাণিজ্য স্থগিতসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ।
এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমানবিক যুদ্ধের বিস্তারিত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডার এবং রাটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক যৌথ গবেষণাপত্র। সেখানে উঠে এসেছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে ৫০ থেকে ১২৫ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি নিহত হতে পারে। এই সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি। গবেষণাটি ২০২৫ সালের একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনা করে করা হয়েছে, যেখানে উভয় দেশ ১৫০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে ।
পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি :
ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডার এবং রাটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড থেকে উৎপন্ন ১৬ থেকে ৩৬ মিলিয়ন টন কালো ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌঁছে সূর্যালোকের প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং বৃষ্টিপাত ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে ।
এছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে পারমাণবিক হামলার ফলে কোটি কোটি মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হতে পারে। বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য তেজস্ক্রিয়তা, খাদ্য ও পানির সংকট, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ধ্বংসের কারণে জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের যুদ্ধের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সামাজিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে।
উভয় দেশের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে পারমাণবিক হামলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোটি কোটি মানুষ নিহত হতে পারেন। আহত ও বিকলাঙ্গ মানুষের সংখ্যাও বিপুল হবে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগতে পারেপ্রায় এক দশক।
এছাড়া পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ছাই বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে সূর্যালোকের প্রবেশ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে । যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে।ৎ
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এই ধরনের যুদ্ধের ফলে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটতে পারে। অতএব, এই সংকটময় মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে উভয় দেশকে সংযত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রবক বলেন, "পারমাণবিক অস্ত্র কোনো যুক্তিসঙ্গত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত নয়, তবে দুর্ঘটনা, হ্যাকিং, আতঙ্ক বা বিকারগ্রস্ত নেতাদের কারণে এটি ব্যবহার হতে পারে।"
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের যুদ্ধ শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়, পুরো বিশ্বে বিপর্যয় ডেকে আনবে।"
তিনি আরও বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যদি পারমাণবিক সংঘর্ষে রূপ নেয়, তবে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের উচিত সংযম প্রদর্শন করা এবং কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা, যাতে মানবজাতি একটি সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়।
এসএস//
আরও পড়ুন